মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭

জাতীয় শোক দিবস ২০১৭ ও কিছু প্রশ্ন

জাতীয় শোক দিবস ২০১৭ ও কিছু প্রশ্ন 

যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা 
                      গৌরী  যমুনা বহমান 
ততদিন রবে কীর্তি তোমার
                         শেখ মুজিবুর রহমান 

আজ ১৫ ই অগাস্ট, মহান শোক দিবস।  ১৯৭৫ সনে ১৫ ই অগাস্ট বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে একদল বিপথগামী সেনাদলের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন, (ইন্না লিল্লাহি ---- রাজিউন)  আজ অবশ্যই বাঙ্গালী ও বাঙালি জাতিসত্তার জন্য একটি শোকের দিন, দুঃখের দিন। কিন্তু আজ আমি আমার মনের কিছু অব্যক্ত কথা বলবো, এতে যদি আমি মনের অজান্তে কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকি তবে ক্ষমা চাইছি, দয়া করে মাফ করে দিবেন। 



স্বাধীনতার প্রায় ৪৬ বছর এবং  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে হত্যার ৪২ বছর পরে ও যখন দেখি জাতির পিতার প্রশ্নে জাতির বিভাজন, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বাগযুদ্ধ, জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার শেষ না হওয়া এই বিষয় গুলো আমাকে খুব কষ্ট দেয়।  আজ বিশ্বের যে কোনো দেশের দিকে তাকাই না কেন, তারা রাজনৈতিক সত্তায় পার্থক্য থাকলেও জাতির পিতার প্রশ্নে তারা অভিন্ন, এমনকি যাদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেই পাকিস্তান ও জাতির নেতার প্রশ্নে এক।
  
তবে আমাদের মধ্যে এত পার্থক্য কেন? আমি একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই, বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ এর সম্পদ, বাঙ্গালী সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ ও আস্থার প্রতীক। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পদ নয়। তাহলে কেন আমরা তাঁকে দল ও মত নির্বিশেষে তাকে জাতির পিতা হিসাবে মানতে পারছি না। কি তার অপরাধ ? আমার মনে হয় যারা মানতে পারছেন না তারা স্বাধীনতা চায়নি, অথবা তাদের মানসিক সমস্যা আছে।  আমি  কয়েকজন বয়জেষ্ঠ্য মানুষদের প্রশ্ন করেছিলাম তারা অনেকে অনেক ধরণের মন্তব্য করেছিল। এই বিষয়ে আমার মোট হলো, ধরে নিলাম উনাদের অভিযোগ সঠিক, তাই বলে কি একজনের ভুল -এর শাস্তি ১৭ জনের হত্যাকান্ড। দেশে কি কোনো বিচার ব্যবস্থা ছিল না।  যাইহোক আমি যার জন্যে লিখতে বসেছি , কিছুদিন আগে আমের এক বন্ধু দুঃখ করে বলছিল আমরা এমন এক জাতি যাদের সরকার পরিবর্তন -এর সাথে সাথে জাতির পিতা পরিবর্তন হয়, তখন এই কথা শুনে নিজেকে খুব ছোট ও অসহায় মনে হলো।  তাই বিভিন্ন বই ও ওয়েবসাইট খুঁজে এই লিখা পাঠকদের কাছে তুলে ধরছিঃ 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  এর সংক্ষিপ্ত জীবনী 


পারিবারিক জীবন বৃত্তান্ত :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় 17 মার্চ, 19২0 সালে একটি সম্মানজনক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ লুৎফুর রহমান এবং মাতা সাইরা বেগমের তৃতীয় সন্তান ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।১৮ বছর বয়সে শেখ মুজিবুর রহমান বেগম ফজিলাতুন্নেছাকে  বিয়ে করেন। পরে তারা দুই কন্যা, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তিন পুত্র, শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের বাবা হয়ে ওঠেন।

শিক্ষা জীবন :
সাত বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু জিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে, তিনি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। পরে, তাকে স্থানীয় মিশনারি স্কুলে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের মানবিক অনুষদের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। 

রাজনৈতিক জীবন :
ছোটবেলা থেকে তার জীবনে নেতৃত্বের ভাব ফুটে ওঠে। ১৯৩৯ সালে যখন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী  'শেরেবাংলা' এ কে ফজলুল হক, হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন তখন তিনি ছাত্রদের একটি গ্রুপ নেতৃত্বে স্কুলের তীক্ষ্ণ ছাদ মেরামত করার জন্য অনুরোধ করেছেন, একই বছর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান নির্মাণের আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন । 

মুজিব ১৯৪০ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশনে যোগদান করেন এবং ১৯৪৩ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগে যোগদান করেন যেখানে তিনি হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নিকট এসেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

ভাষা আন্দোলন
মুজিব ছাত্রদের ধর্মঘট এবং বিক্ষোভ যখন ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান প্রথম ভাষণে আবির্ভূত হয় এবং ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে।

রাজনীতির পথে চলা
তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের জন্য সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা ভাসানীকে যোগদানের জন্য মুসলিম লীগ ত্যাগ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে দলের প্রথম যুগ্ম সচিব এবং তারপর সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুজিব পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদে নির্বাচিত হন এবং কৃষি মন্ত্রী হন। ১৯৫৬ সালে তিনি বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় জোট সরকারে যোগদান করেন।

ছয় দফা প্রস্তাব:
১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর শেখ মুজিব আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রকে কঠোরভাবে বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ১৯৬৬ সালে লাহোরের বিরোধী রাজনৈতিক দলের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে 6-দফা দাবি ঘোষণা করেন।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
মুজিবের 6 দফা দাবির জন্য জনসমর্থনের ভয় ছিল, তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করে, কিন্তু বিপুল জনসাধারণের অস্থিরতায় তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৬২ সালের ৫ ই  ডিসেম্বর তিনি ঘোষণা করেন যে পূর্ব পাকিস্তানকে এখনই বাংলাদেশ বলা হবে।

১৯৭০ এর নির্বাচন
1970 সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে মুজিব নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তার দল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে পূর্ব পাকিস্তানের কট্টর মৌসুমের দুইটি আসন দখল করে। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকরা মুজিবের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবির বিরুদ্ধে সম্পূর্ণভাবে ছিলেন।

৭ ই মার্চ এর ভাষণ
আওয়ামী লীগকে প্রাদেশিক সরকারের গঠনতন্ত্র থেকে বিরত রাখার জন্য তখন পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদে বিলম্বিত হন। 1971 সালের 7 মার্চ ঢাকার রেসকোর্স গ্রাউন্ডে একটি ঐতিহাসিক ভাষণে মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতার আহ্বান জানান। 

ইয়াহিয়া খান মার্শাল আইন ঘোষণা করেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং শেখ মুজিবের গ্রেফতারের আদেশ দেন।

গণহত্যা ও  বাংলাদেশের স্বাধীনতা
1971 সালের ২5 মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট চালু করে নির্দোষ বাঙালিদের বড় আকারের গণহত্যা শুরু করে। শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং জনগণকে পাকবাহিনীর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। পরে ২৬ এ মার্চ আওয়ামীলীগ নেতা এম. এ. হান্নান 

ও ২৭ এ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। 



নতুন দেশ প্রথম সরকার পায়
এপ্রিল 17, 1971 সালের বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী প্রথম সরকার গঠন করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে প্রেসিডেন্ট করা হয়। এর পরেই মুক্তিবাহিনী গঠন করে এবং পাকসেনাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করে।

সর্বশেষে বিজয়
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩ লাখ বাঙালি নিহত হওয়ার পর পাকবাহিনী মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযোগিতার বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করে। একটি নতুন জাতির জন্ম হয়- বাংলাদেশ শেখ মুজিবুর রহমান 1 জানুয়ারি, 197২ সালে দেশে ফিরেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রের দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

পুনর্নির্মাণের শুরু
মুজিব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দেশ পুনর্গঠন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি তার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত ছিলেন, তিনি এক পক্ষের শাসন পরিচালনা করেন। সব রাজনৈতিক দলগুলি বাকশাল নামে পরিচিত পরিচয়পত্রের এক ছাতার নিচে এসেছিল।

গুপ্ত হত্যা:
1975 সালের 15 আগস্টের রাতে রাস্তায় সেনা কর্মকর্তাদের একটি দল মুজিব এবং তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করে দুই মেয়েকে ছাড়া। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের ফলে নবজাতকের ইতিহাসে একটি অযৌক্তিক ধূর্ততা ছড়িয়ে পড়ে নি, বরং দেশটিকে রাজনৈতিক ভ্যাকুয়ামে নিয়ে এসেছিল। গণতন্ত্রের অবসান ঘটাতে শুরু করে এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার একটি বড় বাধা ছিল। 

উপরের আলোচনা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করা হলো।  আমি এখন যা বলবো তা হচ্ছে, অতীতে দেশে শিক্ষিতের হার কম ছিল, তারা বুজতে ভুল করেছিল , কিন্তু বর্তমানে দেশের শিক্ষিতের হার ৫০% এর বেশি, এখনো কেন স্বাধীনতার ঘোষক ও জাতির পিতা প্রশ্নে বিভাজন থাকবে ? কিছুদিন আগে আমি চুল কাটাতে সেলুন গেলে এক গুরুজনের সাথে কথা কাটাজাতি হয়, উনার বক্তব্য ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতার লোভে মুক্তিযুদ্ধ বাঁধিয়েছেন।  এইটা নিয়ে অনেক কথা হয়। তখন মনে হয়ে ছিল বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখবো, তাই আজ লিখলাম। 

মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে অনেক আগে, কিন্তু দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র এখনও চলছে।বিভিন্ন ভাবে দেশের অগ্রগতি বাধা পাচ্ছে।  তবে আশার কথা এটাই যে বর্তমান সরকারের হাত ধরে দেশ অনেক এগিয়েছে, কিন্তু মনের দিক থেকে আমরা অনেক পিছনে আছি।  এখনও অনেক বড় যুদ্ধ বাকি আছে, তা হলঃ 

  • বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ড সহ স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে। 
  •  রাজাকারদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। 
  • রাজাকারদের পরবর্তী প্রজন্মের সন্তানরা যেন দেশ বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত হতে না পারে সে জন্য তাদের উপর নজরদারি রাখতে হবে, বিশেষ করে তাদের সম্পদসমূহ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। 
  • দেশের দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে সরকার কে কঠোর হতে হবে। 
  • সবচেয়ে বড় বিষয় জাতীয় বিষয়ে দল ও মত নির্বিশেষে সবাইকে এক হতে হবে। 
  • সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। 

পরিশেষে বলতে চাই, আমার উদ্দেশ্য কোনো দলকে হেয় করা নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  জাতির জনক, স্বাধীনতার ঘোষক কিন্তু তার মানে এইনয় মুক্তিযুদ্ধে মেজর জিয়াউর রহমান এর কোনো অবদান ছিল না।  প্রত্যেক ব্যক্তি কে নিজনিজ সন্মান পাওয়ার অধিকার আছে। আমি আশা করি সব সমস্যা দূর করে আমরা অচিরে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব ইনশাল্লাহ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন