বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭

সীমান্তের নীলাঞ্জনা পর্ব ৩ সীমান্তের অতীত

.সীমান্তের নীলাঞ্জনা 

পর্ব ৩:  সীমান্তের অতীত 

 চোখের উপর সূর্যের আলো পড়ার সাথে সাথে ঘুম ছোটে সীমান্তের। ঘড়িতে তখন সকাল ৯.৩০ বাজে।কখন যে বাগানে দোলনার উপর ঘুমিয়ে পড়েছিল  বলতে পারবে  না। আড়মোড়া দিতে দিতে বাড়িতে ঢুকতে গেলে পরেশ এসে সামনে দাঁড়ায়-

পরেশ : বাবু তুমি আবার বাগানে ঘুমিয়ে ছিলে, তোমাকে না বলেছি বাগানে এভাবে ঘুমাবে না। 

সীমান্ত: ভুল হয়েছে, আর হবে না। 

পরেশ : তুমি এই ভাবে যন্ত্রনা দিলে একদিন সব ছেড়ে চলে যাবো।

সীমান্ত: (মুচ্কি হেসে ) এই পৃথিবীতে তোমার ও আমার কেউ নাই। আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাবে?

পরেশ : এই জন্যই এত যন্ত্রনা দাও। 

সীমান্ত : আহ! বললাম তো, আর হবে না। আচ্ছা ভালো কথা সেই মেয়েটি কোথায়? সে কি নাস্তা করেছে?

পরেশ : না, ঘুম থেকে উঠেছে মাত্র।

সীমান্ত: ঠিক আছে টেবিল এ আমাদের দুজনের জন্য নাস্তা নিয়ে এসো, আর ওকে ডাক দাও। 
পরেশ: ঠিক আছে। 

এটা বলে পরেশ নাস্তা তৈরি করতে চলে গেল আর সীমান্ত ডাইনিং টেবিল এ বসলো।সংবাদপত্রের উপর চোখ বুলাতে বুলাতে যখন মেয়েটির উপর চোখ পড়ল, তখন মনে হলো মেয়েটি সত্যিই খুব সুন্দর।  চোখের পলক যেন পড়তেই চায় না।  এভাবে কিছুক্ষন অপলক তাকিয়ে থাকার পর নীলাঞ্জনার আওয়াজ শুনে নিস্তব্ধতা কেটে যায় -----

নীলাঞ্জনা: আর কেউ খাবে না।

সীমান্ত : কে খাবে ?

নীলাঞ্জনা: কেন এই বাড়িতে আর কেউ নেই ?

সীমান্ত: এই বাড়িতে আমি আর পরেশ ছাড়া কেউ নেই।  একসময় সবই ছিল কিন্তু বাড়ি ছিল না। এখন বাড়ি আছে   কিন্তু এখানে থাকার মতো কেউ নেই। (এ কথা বলার সাথে সাথে নাস্তা না করে ডাইনিং টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো সীমান্ত )

নীলাঞ্জনা: নাস্তা না করে উনি এভাবে উঠে গেলেন কেন?

পরেশ : বাবুর মা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। এরপর থেকে বাবু এমন হয়ে গেছে, বাবুর মনে অনেক দুঃখ। যদি পারতাম ভগবানের কাছ থেকে নিজের জীবনের বিনিময়ে তার জীবনে সুখ এনে দিতাম।

এই কথা শুনে নীলাঞ্জনা ও না খেয়ে উঠে যাচ্ছিলো ____

পরেশ : একি মা। আপনি খাবেন না।

নীলাঞ্জনা: এভাবে রাখুন, আমি উনাকে নিয়ে আসছি।

খুঁজতে খুঁজতে নীলাঞ্জনা সীমান্তকে বাগানে দেখতে পায়।  তখন ________

নীলাঞ্জনা: সরি, আমি মনে করতাম আমি হয়তো প্রথিবী তে সবচেয়ে দুঃখী, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার চেয়ে দুঃখী আপনি।

সীমান্ত: সরি। আসলে আমার ঐভাবে রিয়াক্ট করা উচিত হয়নি।

নীলাঞ্জনা : আমি কি এইখানে বসতে পারি?

সীমান্ত : ও নিশ্চয়ই।

নীলাঞ্জনা : যদি কিছু মনে না করেন, আপনার অতীত সম্পর্কে জানতে চাই।

সীমান্ত : কি হবে জেনে? শুধু শুধু দুঃখ বাড়বে।

নীলাঞ্জনা : না বরং শেয়ার করলে দুঃখ কমবে।

সীমান্ত : ঠিক আছে তবে শুনুন ____

আমার বাবা ছিলেন বড় ব্যাবসায়ী।  আমাদের ছিল যৌথ পরিবার। তাই বাবার সাথে কাকাও তার ব্যবসার পার্টসহযোগী ছিলেন। হটাৎ এক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা নিহত হন। তখন আমি ৯ম শ্রেণীতে পড়ি।  মূলত তখন থেকে আমাদের জীবনে নেমে আসে এক দুঃখের পাহাড়।  কাকা মাকে নানা অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বেদখল করে দেন। তখন আমরা আমার মামার বাসায় আশ্রয় নেই।  কিন্তু সেখানেও আমরা সুখে ছিলাম না।  সেখানে মা কাজের বুয়ার মতবাড়ির সব কাজ করত। আর আমার বাড়ির বাজার সোহো ছোট কাজ করতে হতো। মা এত দুঃখে থেকে ও কখনো বুজতে দিতেন না। রাতের বেলায় সব কাজ শেষ করে যখন শুয়ে শরীর ব্যথায় কষ্ট পেতেন তখন যদি আমি মালিশ করতে যেতাম, তখন আমায় বলতো, এই বেথা কিছু না তুই যেদিন মানুষ এর মত মানুষ হবি সেদিন আমার কোনো বেথা থাকবে না, সেদিন আমি হবো দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ।

মা বুঝতে পারছিলেন ঐখানে আমার পড়াশুনায় অসুবিধা হচ্ছে।  তাই এস. এস.সি পাশের পর আমাকে হোস্টেল এ থেকে পড়াশুনা করতে বললেন আর বের হওয়ার বললেন আর সহজে  যেন বাসায় না যাই । সেই থেকে শুরু হোস্টেল জীবন মনে হয় পাঁচ বছরে মাত্র ১০-১২দিন ছিলাম। যখন বাংলা কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি, হটাৎ একদিন বাসা থেকে ফোন আসলো, বলা হলো তৎক্ষণাৎ যেন বাসায় যাই। কাউ কে কিছু না বলেই বেরিয়ে পড়ি বাড়ির উদ্দেশ্যে, পরে বাসায় ঢুকতেই দেখি মা আমাকে ছেড়ে অজানার উদ্দেশে যাত্রা করেছে, সে মাকে দাহ করার সাথে সাথে মনে হচ্ছিলো যেন আমি আমাকে দাহ করে ফেলেছি। পরে শুনতে পেলাম মা যক্ষা ও হার্ট এটাকে মারা গেছে।  তখন থেকে প্রতিজ্ঞা করেছি টাকা উপার্জন জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য।  এখন আমার সব আছে কিন্তু দেবী রুপী মাই আমার সাথে নেই(এই বলে অঝোরে কাঁদতে লাগলো সীমান্ত)।

নীলাঞ্জনা : প্লিজ কাঁদবেন না।  থামুন (নিজের চোখ মুছতে মুছতে বলে)।

সীমান্ত: একি! আমি আপনাকেও ইমোশনাল করে দিলাম। নাস্তা করেছেন আপনি।

নীলাঞ্জনা : না ভেবেছিলাম একসাথে করব। ১২.২০ বাজে। এখন এর করবো না।

সীমান্ত : চা খাবেন নিশ্চয়ই।

নীলাঞ্জনা: খাওয়া যেতে পারে।

সীমান্ত : পরেশ।

পরেশ : জি বাবু।
           
সীমান্ত : আমাদের দুই কাপ চা দাও।  নাস্তা টেবিল থেকে তুলে ফেলো। তোমার জন্যেও চা বানাও, জানি তুমি ও নাস্তা করো নি।

পরেশ : ঠিক আছে বাবু। এই বলে চলে গেল।

নীলাঞ্জনা : আমি চলে যেতে চাইছি।

সীমান্ত : আর কিছুদিন থেকে গেলে হতো না।

নীলাঞ্জনা : না। আপনার আর কষ্ট বাড়াতে চাই না।

সীমান্ত : না, কষ্ট নয়।  বরং ভাল লাগতো কারণ এই বাড়িতে আমরা দুইজন ছাড়া আর কেউ নেই। তাই থাকলে গল্প করা যেত। একটি রিকোয়েস্ট করবো।

নীলাঞ্জনা : করুন।

সীমান্ত :  কিছু মনে না করলে শাড়িটা চেঞ্জ করে ফেলুন।

নীলাঞ্জনা : নিশ্চয়। শাড়িটা কার?

সীমান্ত : আমার মায়ের।

নীলাঞ্জনা : ঠিক আছে।  আমি চেঞ্জ করে আসছি।

এই বলে নীলাঞ্জনা বাড়ির ভেতরে গেল। ততক্ষনে পরেশ চা নিয়ে বাগানে চলে এসেছে __

পরেশ : বাবু চা নাও।

সীমান্ত : দাও।

পরেশ : বাবু, একটা কথা বলব।

সীমান্ত : হ্যা।  বলো

পরেশ : দিদির জন্য কিছু কাপড়  কিনে নিয়ে এস।

সীমান্ত: ও তাইতো। আমার তো মনেই ছিল না।  ঠিক আছে, আনবো।

 ততক্ষনে নীলাঞ্জনা বাগানে চলে এসেছে এবং দুইজন মিলে চা খেতে শুরু করল। _______




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন